Thursday, August 6, 2009

হাদিস সংগ্রহে ইমাম তিরমিযীর (রহ:) অবদান


মাওলানা শাহ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান

হাদিস সংগ্রহে যে কয়জন মহামনীষী কৃতিত্বের স্বাড়্গর রেখেছেন, যাদের অক্লানত্ম পরিশ্রমের বিনিমেয়ে হাদিসগুলো আমরা পেয়েছি তাঁদের নাম চিরদিন সোনালী অড়্গরে লেখা থাকবে। ইমাম তিরমিজি (রহ:) তাঁদের মধ্যে একজন অন্যতম হাদিস বিশারদ। সিহাহ্‌ সিত্তাহ্‌র চতুর্থ গ্রন্থ জামে তিরমিযীর সংকলকের প্রকৃত নাম মুহাম্মদ, কুনিয়াত নাম-আবু ঈসা, লকব-ইমামুল হাফেজ। তাঁর পূর্ণনাম ও নসবনাম হল আল ইমামুল হাফেজ আবু ঈসা মুহাম্মদ ঈবনে ঈসা সত্তরাতা ইবনে মুসা ইবনে জাহাকুস সুলামী আত তিরমিযী। তিনি ট্রান্স অক্সিয়ানার তিরমীয নামক প্রাচীন শহরের বুগী নামক স্থানে ২০৯ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। আলস্নামা বাকারীর মতে, তাঁর পূর্ব পুরম্নষগণ মুরাদ নামক শহরের বাসিন্দা ছিলেন। অতঃপর খোরাসানের অনত্মর্গত তিরমীয শহরের জিহরত করেন, যা জিহুন নদীর তীরে একটি প্রসিদ্ধ শহর। এ শহরে অসংখ্য মুহাদ্দিস এবং প্রখ্যাত ওলামা জনগ্রহণ করায় একে “মাদীনাতুর রিজাল” বলা হয়।

ইমাম তিরমিযী (রহ:) প্রাথমিক শিড়্গা নিজগৃহে সমাপন করেন। অতঃপর তিনি মসুলিম জাহানের প্রখ্যাত হাদীস কেন্দ্রসমূহ পরিভ্রমণ করে হাদীস শ্রবণ ও সংগ্রহ করেন। কুফা, বসরা, রাই, খোরাসান, ইরাক, হিজায, মিশর হাদীস সংগ্রহের জন্য তিনি বছরের পর বছর সফর করতে থাকেন।

ইমাম তিরমিযী তাঁর সময়কাল বড় বড় হাদীসবিদদের কাছ থেকে হাদীস শ্রবণ ও গ্রহণ করেছেন। তিনি সর্বমোট এক হাজার উসত্মাদ থেকে হাদীস সংগ্রহ করেন। তাঁদের মধ্যে কুতাইবা ইবনে সায়ীদ, ইসহাক ইবনে মুসা, মাহমুদ ইবনে গীলান, সায়ীদ ইবনে আঃ রহমান, মাহাম্মদবিন বিশর, আলী ইবনে হাজার, আহমদ ইবনে মুনী, মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না সুফিয়ান ইবনে অকী এবং মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈলুল বুখারী প্রমুখ মুহাদ্দিস ইমাম তিরমিযীর ওসত্মাদ (আল হাদীস ওয়াল মুহাদ্দেসুন পৃ: ৩৬০)।

ইমাম তিরমিযী তীড়্গ্ন স্মরণশক্তির অধিকারী ছিলেন। কোন হাদীস একবার শুনলে দ্বিতীয়বার শুনার আর প্রয়োজন হতো না। সাথে সাথে তা তাঁর মুখসত্ম হয়ে যেত। ইমাম তিরমিযী জনৈক এক মুহাদ্দিসের বর্ণিত কয়েকটি হাদীস শ্রবণ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর সাথে কোন দিন সাড়্গাৎ ঘটেনি। এজন্য সে মুহাদ্দিসের সাড়্গাৎ লাভের উদগ্রীব বাসনা তাঁর হৃদয়ে জাগ্রত ছিল। একদিন পথিমধ্যে হঠাৎ তাঁর সাড়্গাৎ পান এবং তাঁর কাছ থেকে সমসত্ম হাদীস শ্রবণের বাসনা প্রকাশ করেন। তিনি বিশেষ অনুরোধক্রমে পথের মধ্যে দাঁড়িয়েই সমসত্ম হাদীস মুখসত্ম পাঠ করেন। তা শ্রবণ মাত্রই সকল হাদীস ইমাম তিরমিযীর মুখসত্ম হয়ে যায়। তা দেখে সে মুহাদ্দীস বিস্মিত হয়ে পড়েন। তাঁর মেধা পরীড়্গার তিনি আরো চলিস্নশটি হাদীস পাট করেন, তাও সাথে সাথে ইমাম তিরমিযীর মুখসত্ম হয়ে যায়, এবং পুনরায় ওসত্মাদকে শুনিয়ে দেন। অথচ ইতিপূর্বে এ হাদীসগুলো তিনি আর কখনও শ্রবণ করেননি। এটাই ছিল তাঁর অসাধারণ মেধার পরিচয়। এছাড়া তাঁর স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে অনেক ঘটনা বিদ্যমান রয়েছে। অসাধারণ মেধার কারণে ইমাম বুখারী তাঁর সম্পর্কে অনেক প্রশংসাসূচক কথা বলতেন।

ইমাম তিরমিযী বহু মূল্যবান গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। আল জামেউত তিরমিযী, কিতাবুল আসমা, আল কুনী, শামায়েলুত তিরমিযী, তাওয়ারীখ ও কিতাবুল যুহুদ প্রভৃতি তাঁর যুগানত্মকারী গ্রন্থ। ইমাম তিরমিযীর হাদীস গ্রন্থ ‘জামে তিরমিযী’ নামে খ্যাত। একে সুনানও বলা হয়। ইমাম তিরমিযী তাঁর সংগৃহীত পাঁচ লাখ হাদীস হতে বাছাই করে ১৬০০ হাদীস তার সুনানের মধ্যে সংকলন করেছেন। তিনি সর্বপ্রথম হাদীস বর্ণনাকারীদের নাম, উপনাম ও খেতাব নির্ধারণ করেননি এবং বিচিত্র নামসমূহ উদ্ভাবন করে নির্ভরযোগ্য মাত্রা স্থির করার চেষ্টা করেন। ইমাম তিরমিযী তাঁর ‘জামে’ গ্রন্থখানি ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম বুখারী অনুসৃত গ্রন্থ প্রণয়ন রীতি অনুযায়ী সংকলন করেছেন।

হাফেজ আবু তাহের ইবনে যুবাই (মৃ: ৭০৮ হি:) সম্পর্কে বলেন- ‘ইমাম তিরমিযী বিভিন্ন বিষয়ের হাদীস একত্র করে গ্রন্থখানি প্রণয়ন করার যে বৈশিষ্ট্য লাভ করেছেন, তাতে তিনি অবিসংবাদিত’। ইমাম তিরমিযী তাঁর এ গ্রন্থখানি সম্পর্কে অত্যনত্ম হৃদয়ের সাথে দাবী করে বলেন-‘যার ঘরে এ কিতাবখানি থাকবে, মনে করা যাবে যে তাঁর ঘরে স্বয়ং নবী করিম (স:) অবস্থান করছেন ও নিজে কথা বলছেন।’ বস্তুত: সহীহ গ্রন্থসমূহের এটাই সঠিক মর্যাদা। তিরমিযী শরীফের সহজবোধ্যতা সর্বজনবিদিত। এ কারণে শায়খুল ইসলাম হাফেজ আবু ইসমাইল আব্দুলস্নাহ আনসারী তিরমিযী শরীফকে অধিক ব্যবহারোপযোগী বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কেননা তিরমিয়ী শরীফ হতে সাধারণ পাঠকও উপকার পেতে পারেন।

ইমাম তিরমিযীর বহুসংখ্যক ছাত্র তাঁর কাছ থেকে এ গ্রন্থখানি শ্রবণ করেছেন।

ইমাম তিরমিযী (রহ:) অত্যনত্ম পরহেজগার এবং মুত্তাকী লোক ছিলেন। তিনি গভীর রাত পর্যনত্ম জেগে জেগে আলস্নাহর ইবাদত করতেন। এমনকি জাহান্নামের ভয়ে আলস্নাহতায়ালার দরবারে ক্রন্দন করতেন। এ ক্রন্দনের কারণে শেষ বয়সে এসে তাঁর দৃষ্টিশক্তি বিলুপ্ত হয়ে যায়। তিনি ২৮৯ হিজরীতে ৭০ বছর বয়সে তিরমিয শহরে ইনেত্মকাল করেন। আলস্নাহপাক তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করম্নন ও তার হাদীসগুলি আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করম্নন, আমীন।

Source : http://www.ittefaq.com/content/2009/07/31/news0584.htm

1 comment:

  1. Dear brother for the time being i just go through the islamic articles but as ur blog carries so many important things i will be back here later. Any islamic article in bangla will be higly appriciated

    ReplyDelete