Thursday, August 6, 2009

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে শবে বরাত : ফযীলত ও আমল

ড. খন্দকার আবদুলস্নাহ জাহাঙ্গীর

ফার্সী ভাষায় “শব” শব্দটির অর্থ রাত বা রজনী। বরাত শব্দটি আরবী থেকে গৃহীত। বাংলায় “বরাত” শব্দটি “ভাগ্য” বা “সৌভাগ্য” অর্থে ব্যবহৃত হলেও আরবীতে এ শব্দটির অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আরবীতে “বারাআত” শব্দটির অর্থ বিমুক্তি, সম্পর্কচ্ছিন্নতা, মুক্ত হওয়া, নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া ইত্যাদি। ফার্সী “শবেবরাত”, আরবী “লাইলাতুল বারাআত” বা “বিমুক্তির রজনী” বলতে আরবী ৮ম শা’বান মাসের মধ্যম রজনী বুঝানো হয়।

কুরআন ও হাদীসে “লাইলাতুল বারাআত” পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়নি। সাহাবী-তাবিয়ীগণের যুগেও এ পরিভাষাটির ব্যবহার জানা যায় না। এ রাতটিকে হাদীস শরীফে “লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান” বা “মধ্য শা’বানের রজনী” বলা হয়েছে। সাহাবী তাবিযীগণের যুগের অনেক পরে এ রাতটিকে “লাইলাতুল বারাআত” বা “বিমুক্তির রজনী” বলে আখ্যায়িত করার প্রচলন দেখা দেয়। আমরা জানি, পরিভাষার বিষয়টি প্রশসত্ম তবে মুমিনের জন্য সর্বদা কুরআন সুন্নাহ ও সাহাবীগণের ব্যবহৃত পরিভাষা ব্যবহার করাই উত্তম। সাধারণ পাঠকের সহজবোধ্যতার জন্য আমরা মাঝে মাঝে “শবে বরাত” “লাইলাতুল বারাআত” পরিভাষা ব্যবহার করলেও সাধারণভাবে এ প্রবন্ধে “শবে বরাত” বুঝাতে “শাবান মাসের মধ্যম রজনী” বা “মধ্য-শাবানের রজনী” পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে।


শবে বরাত বা লাইলাতুল বারা’আত পরিভাষা কুরআন কারীমে কোথাও ব্যবহৃত হয়নি। “লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান” বা “মধ্য-শাবানের রজনী” পরিভাষাটিও হাদীসের ভাষা তবে কুরআন কারীমের একটি আয়াতের ব্যাখ্যার মুফাস্‌সিরগণ “শবে বরাত” প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। মহান আলস্নাহ বলেন:

“আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক (বরকতময়) রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যক গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। (সূরা দুখান-৩-৪ আয়াত)।

‘মুবারক রজনী’-র ব্যাখ্যায় বিভিন্ন সাহাবী ও তাবিয়ী বলেছেন যে, এ রাতটি হলো ‘লাইলাতুল কাদ্‌র’ বা ‘মহিমান্বিত রজনী’। সাহাবীগণের মধ্য থেকে ইবনু আব্বাস (রা:) ও ইবনু উমার (রা:) থেকে অনুরূপ ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে। তাবেয়ীগণের মধ্যে থেকে আবু আব্দুর রহমান আল-সুলামী (৭৪ হি), মুজাহিদ বিন জাব্‌র (১০২ হি), হাসান বসরী (১১০ হি), ক্বাতাদা ইবনু দি’আমা (১১৭ হি) ও আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম (১৮২ হি) বিশেষভাবে উলেস্নখযোগ্য। তাঁরা সকলেই বলেছেন যে, লাইলাতুম মুবারাকাহ অর্থ লাইলাতুল কাদ্‌র (তাবারী)।

কুরআন কারীমে ‘শবে-বরাত’ বা ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান’ সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। মধ্য শা’বানের রজনী বা শবে বরাত সম্পর্কে প্রচলিত হাদীসগুলোকে সেগুলোর অর্থ ও নির্দেশনার আলোকে সাত ভাগে ভাগ করা যায়:

১. সাধারণ ফযীলতের হাদীস।

২. উক্ত রাতে হায়াত মওত ও রিযক নির্ধারণ বিষয়ক হাদীস।

৩. এ রাতে দোয়া-মুনাজাত করতে উৎসাহজ্ঞাপক হাদীস।

৪. এ রাতে অনির্ধারিতভাবে সালাত আদায়ে উৎসাহজ্ঞাপক হাদীস।

৫. নির্ধারিত রাক’আত সালাত নির্ধারিত পদ্ধতিতে আদায়ে উৎসাহজ্ঞাপক হাদীস।

৬. সনদ বিহীন কিছু প্রচলিত কথা।

৭. উক্ত রাত সম্বন্ধে সাহাবা ও তাবেয়ীগণের পড়্গ থেকে কতিপয় বক্তব্য ও আমল।

আবু মুসা আশআরী (রা.) বলেন, রাসুলুলস্নাহ বলেছেন, “মহান আলস্নাহ মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ড়্গমা করে দেন।” (ইবনু খাজাহ)

আবু সা’লাবা আল-খুশানী (রা:) বলেন, রাসূলুলস্নাহ বলেছেন:

“যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন আলস্নাহ্‌ তা’য়ালা তাঁর সৃষ্টি জীবের প্রতি দৃকপাত করেন। অতপর মুমিনদেরকে মার্জনা করে দেন। আর হিংসা-বিদ্বেষ ও পরশীকাতরতায় লিপ্তদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেন। আম সুন্নাহ-২২৩-২২৪ পৃ:

আবুবকর (রা:) বর্ণনা করেছেন,

“যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন আলস্নাহ্‌ তা’য়ালা দুনিয়ার আসমানে অবরতণ করেন। অত:পর তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে শিরকে জড়িত অথবা নিজের ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ড়্গমা করে দেন।”

এ হাদীসটি ইমাম বয্‌যার ও অন্যান্য মুহাদ্দিস আব্দুল মালিক ইবনু আব্দুল মালেকের সনদে আবু বাক্‌র (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন। আলস্নামা হায়সামী বলেন, এ সনদের আব্দুল মালেক ইবনু আব্দুল মালেককে ইবনু আবি হাতিম (রা:) তার ‘আল-জারহু ওয়াত তা’দীল’ নামক গ্রন্থে উলেস্নখ করেছেন তবে তার কোনো দুর্বলতা উলেস্নখ করেননি। এছাড়া সনদের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য। কিন্তু ইমামুল মুহাদ্দিসীন ইমাম বুখারী (রা:) উক্ত আব্দুল মালেক ইবনু আব্দুল মালেক এবং তার এ সনদকে দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বুখারী-৫/৪২৪

আয়েশা (রা:) বলেন, রাসূলুলস্নাহ বলেছেন:

“মহিমান্বিত পরাক্রানত্ম আলস্নাহ মধ্য শা’বানের রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। অত:পর ‘কালব’ সম্প্রদায়ের মেষপালের পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে ড়্গমা করে দেন।”

হাদীসটি ইমাম তিরমিযী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন।

আয়শার (রা:) বলেন, মধ্য শাবানের রাতে কিছু আছে কি?

“এ রাতে চলতি বছরে জন্ম-গ্রহণকারী আদম সনত্মানদের নাম এবং চলতি বছরে মৃত্যুবরণকারী আদম সনত্মানদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। এ রাতে আদম সনত্মানদের আমল উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তাদের রিযক অবতীর্ণ হয়ঃ। (বায়হাকী)

আয়শার (রা:) সূত্রে বলা হয়-

“মহান আলস্নাহ্‌ চার রাতে হায়াত, মওত ও রিয্‌ক লিপিবদ্ধ করেন। মধ্য শাবান, ঈদুল আযহা, ঈদুল ফিতর ও আরাফার রাতে।”

এ হাদীসটি ইবনু হাজার আসক্বালানী (৮৫৫ হি) তাঁর যয়ীক রাবীদের জীবনীগ্রন্থ “লিসানুল মীযান’-এ উলেস্নখ করেছেন। তিনি আহমদ ইবনু কা’ব আল ওয়াছেতী নামক ৪র্থ হিজরী শতাব্দীর একজন দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য রাবীর জীবনীতে এ হাদীসটি উলেস্নখ করেছেন। তিনি উলেস্নখ করেছেন যে, আহমদ ইবনু কা’ব বর্ণিত বাতিল ও মুনকার হাদীসগুলোর মধ্যে এ হাদীসটি অন্যতম। ইবনু হাজার আরো বলেন: ইমাম দারাকুতনী (৩৮৫ হি) তাঁর ‘গারাইব মালিক’ নামক গ্রন্থে এ হাদীসটি আহমদ বিন কা’ব হতে, ইমাম মালিকের সূত্রে আয়েশা (রা:) থেকে উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদীসটি অগ্রহণযোগ্য। কারণ এর সনদের মধ্যে ইমাম মালেকের পরে যাদের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে তারা সকলেই দুর্বল বা অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। লিমান আল মিজান ১/২৪৯)।

পূর্বোক্ত দু’প্রকারের হাদীসে মধ্য শাবানের রজনীর ফযীলত বা মর্যাদা সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় বলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোতে এ রাতে বিশেষ কোনো নেক আমলের নির্দেশ বা উৎসাহ প্রদান করা হয়নি। মধ্য শাবানের রজনীর ফযীলত বিষয়ে বর্ণিত তৃতীয় প্রকারের হাদীসগুলোতে এ রাত্রিতে সাধারণভাবে দোয়া করার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এ রাতে দোয়া করা, আলস্নাহর কাছে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আকুতি জানানো এবং জীবিত ও মৃতদের পাপরাশি ড়্গমা লাভের জন্য প্রার্থনা উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

উসমান ইবনু আবিল আস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুলস্নাহ বলেছেন: “যখন মধ্য-শাবানের রাত আগমন করে তখন একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, কোন ড়্গমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ড়্গমা করব। কোন যাচনাকারী আছে কি? আমি তাকে দান করব। ব্যাভিচারিণী ও শিরকে জড়িত ব্যতীত যত লোক যা কিছু চাইবে সকলকেই তাদের প্রার্থনা পূরণ করে দেয়া হবে। (বায়হাকী)

আবূ উমামা (রা:)-এর সূত্রে, রাসূলুলস্নাহ এর নামে কথিত আছে যে:

“পাঁচ রাতের দোয়া বিফল হয় না। রজব মাসের প্রথম রাত, মধ্য শাবানের রাত, জুমআর রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত।”

হাদীসটি ইবনু আসাকির (৫৭১ হি) তার ‘তারীখ দিমাশক’ গ্রন্থে আবু সাঈদ বুনদার বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ রূইয়ানির সূত্রে, তিনি ইবরাহীম বিন আবি ইয়াহয়িয়া থেকে, তিনি আবু কা’না থেকে, তিনি আবু উমামা বাহেলী (রা:) থেকে বর্ণনা করেন। ইমাম সুয়ুতী তাঁর “আল জামে আল সাগীর” গ্রন্থে ইবনু আসাকিরের উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীসটি যয়ীফ হিসাবে উলেস্নখ করেছেন।

আয়শা (রা:) বলেন,

এক রাতে আমি রাসূলুলস্নাহকে খুঁজে পেলাম না। তখন বের হয়ে দেখি তিনি বাক্বী’তে (আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে) রয়েছেন। তিনি বললেন, তুমি কি আশংকা করছিলে যে, আলস্নাহ ও তাঁর রাসুল তোমার উপর অবিচার করবেন! আমি বললাম, হে আলস্নাহর রাসূল, আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর নিকট গমন করেছেন। তখন তিনি বলেন, মহিমান্বিত পরাক্রানত্ম আলস্নাহ মধ্য শাবনের রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং ‘কালব’ গোত্রের মেষপালের পশমের অধিক সংখ্যককে ড়্গমা করেন।

এ হাদীসটি তিরমিযী, ইবনু মাজাহ এবং আহমদ বিন হাম্বল একই সনদে আহমদ ইবনু মানী থেকে, তিনি ইয়াযিদ ইবনু হারূন থেকে, তিনি হাজ্জাজ ইবনু আরত্বা থেকে, তিনি ইয়াহয়িয়া ইবনু আবি কাসীর থেকে, তিনি উরওয়াহ থেকে, তিনি আয়শা (রা:) থেকে বর্ণনা করেন। (তিরমিজি)

আলী (রা:) বলেন (রাসুল (স:) বলেছেন,

যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাতে (সালাতে-দোয়ায়) দণ্ডায়মান থাক এবং দিবসে সিয়াম পালন কর। কারণ; ঐ দিন সূর্যাসেত্মর পর মহান আলস্নাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কোন ড়্গমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ড়্গমা করব। কোন রিয্‌ক অনুসন্ধানকারী আছে কি? আমি তাকে রিয্‌ক প্রদান করব। কোন দুর্দশাগ্রসত্ম ব্যক্তি আছে কি? আমি তাকে মুক্ত করব। এভাবে সুবহে সাদিক উদয় হওয়া পর্যনত্ম চলতে থাকে।

এ হদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ তাঁর উসত্মাদ হাসান বিন আলী আল-খালস্নাল থেকে, তিনি আব্দুর রাজ্জাক থেকে, তিনি ইবনু আবি সাবরাহ থেকে, তিনি ইবরাহীম বিন মুহাম্মদ থেকে, তিনি মুয়াবিয়া বিন আব্দুলস্নাহ বিন জাফর থেকে, তিনি তাঁর পিতা আব্দুলাহ বিন জাফর থেকে, তিনি আলী ইবনু আবী তালিব (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন। (ইবন মাজাহ)

আয়শা (রা:) বলেন, “রাসূলুলস্নাহ আমার ঘরে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর পোশাকটি খুলে রাখলেন। কিন্তু তৎড়্গণাৎ আবার তা পরিধান করলেন। এতে আমার মনে কঠিন ক্রোধের উদ্রেক হয়। কারণ আমার মনে হলো যে, তিনি আমার কোন সতীনের নিকট গমন করেছেন। তখন আমি বেরিয়ে তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং দেখতে পেলাম যে, তিনি বাক্বী গোরস্থানে মুমিন নরনারী ও শহীদদের পাপ মার্জনার জন্য দোয়া করছেন। আমি (মনে মনে) বললাম, আমার পিতা মাতা আপনার জন্য কুরবানী হউন, আমি আমার জাগতিক প্রয়োজন নিয়ে ব্যসত্ম আর আপনি আপনার রবের কাছে ব্যসত্ম। অত:পর আমি ফিরে গিয়ে আমার কড়্গে প্রবেশ করলাম, তখন আমি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাঁপাছিলাম। এমতাবস্থায় রাসূলুলস্নাহ (স:) আমার নিকট আগমন করে বললেন, আয়শা, তুমি এভাবে হাঁপাচ্ছ কেন? আয়শা বললেন, আমার পিতা মাতা আপনার জন্য কুরবানী হউন, আপনি আমার কাছে আসলেন এবং কাপড় খুলতে শুরম্ন করে তা আবার পরিধান করলেন। ব্যাপারটি আমাকে খুব আহত করল। কারণ আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি আমার কোন সতীনের সংস্পর্শে গিয়েছেন। পরে আপনাকে বাক্বী’তে দোয়া করতে দেখলাম। তিনি বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি আশংকা করেছিলে যে, আলস্নাহ ও তদীয় রাসুল তোমার উপর অবিচার করবেন? বরং আমার কাছে জিবরাঈল (আ:) আসলেন এবং বললেন, এ রাত্রটি মধ্য শাবানের রাত। আলস্নাহ তা’য়ালা এ রাতে ‘কালব’ সম্পদায়ের মেষপালের পশমের চাইতে অধিক সংখ্যককে ড়্গমা করেন। তবে তিনি শিরকে লিপ্ত, বিদ্বেষী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, কাপড় ঝুলিয়ে (টাখনু আবৃত করে) পরিধানকারী, পিতা মাতার অবাধ্য সনত্মান ও মদ্যপায়ীদের প্রতি দৃষ্টি দেন না।

অত:পর তিনি কাপড় খুললেন এবং আমাকে বললেন, হে আয়শা, আমাকে কি এ রাতে ইবাদত করার অনুমতি দিবে? আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোন! অবশ্যই। অত:পর তিনি সালাত আদায় করতে লাগলেন এবং এমন দীর্ঘ সিজদা করলেন আমার মনে হলো যে, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। অত:পর আমি (অন্ধকার ঘরে) তাকে খুঁজলাম এবং তাঁর পদদ্বয়ের তালুতে হাত রাখলাম। তখন তিনি নড়াচড়া করলেন। ফলে দুশ্চিনত্মা-মুক্ত হলাম। আমি শুনলাম, তিনি সিজদারত অবস্থায় বলছেন: ‘আমি আপনার কাছে শাসিত্মর পরিবর্তে ড়্গমা চাই, অসন্তুষ্টির পরিবর্তে সন্তুষ্টি চাই। আপনার কাছে আপনার (আজাব ও গজব) থেকে আশ্রয় চাই। আপনি সুমহান। আপনার প্রশংসা করে আমি শেষ করতে পারি না। আপনি তেমনই যেমন আপনি আপনার প্রসংশা করেছেন।

আয়শা (রা:) বলেন, সকালে আমি এ দোয়াটি তাঁর কাছে উলেস্নখ করলাম। তিনি বললেন, হে আয়শা, তুমি কি এগুলো শিখেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, হে আয়শা তুমি এগুলো ভাল করে শিখ এবং অন্যকে শিড়্গা দাও। জিবরাঈল (আ:) আমাকে এগুলো শিড়্গা দিয়েছেন এবং সিজদার ভিতরে বারবার বলতে বলেছেন। (বায়হাকীর শুয়াবুল ইমান ২/৩৮৩)

এ হাদীসে মধ্য শাবানের রাতে রাত জেগে নামায আদায় করা, নামাজের সিজদায় বিভিন্ন দোয়া করা এবং মৃতদের জন্য ড়্গমা প্রার্থনা করতে সুস্পষ্ট উৎসাহ দেয়া হয়েছে। তবে হাদীসটি অত্যনত্ম দুর্বল ও বাতিল। ইমাম বায়হাক্বী হাদীসটি উদ্ধৃত করার পর বলেন, এ সনদটি দুর্বল।

“যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে প্রত্যেক রাকআতে ৩০ বার সুরা ইখলাস পাঠের মাধ্যমে ৩০০ রাকাত সালাত আদায় করবে জাহান্নামের আগুন অবধারিত এমন ১০ ব্যক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।” হাদীসটি আলস্নামা ইবনুল ক্বাইয়্যিম ভিত্তিহীন হাদীসসমূহের মধ্যে উলেস্নখ করেছেন। (আল জাওনিয়া-১/১৯৯০)

মধ্য শাবানের রজনীতে এ পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন হিজরী চতুর্থ শতকের পরে মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ উলেস্নখ করেছেন যে, ৪৪৮ হি. সনের বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রথম এ রাত্রিতে এ পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন শুরম্ন হয়। মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/৩৮৮ এ সময়ে বিভিন্ন গল্পকার ওয়ায়েয এ অর্থে কিছু হাদীস বানিয়ে বলেন।

Source : http://www.ittefaq.com/content/2009/07/31/news0582.htm

No comments:

Post a Comment