ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বর্তমানে একটি নতুন বিষয় সংযোজিত হয়েছে। এর নাম হচ্ছে শেয়ার ব্যবসা। প্রাচীনকালে কয়েক ব্যক্তির সমন্বয়ে শিরকত বা অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ম প্রচলিত ছিল। একে বর্তমান কালের পরিভাষা অনুসারে 'পার্টনারশিপ ব্যবসা' বলা হয়। বিগত দু'তিন শতাব্দী হতে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি নামে শরীকানা ব্যবসার আরেকটি পদ্ধতি চালু হয়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন পরিস্থিতে সৃষ্টি হয়েছে। শেয়ার বেচাকেনা চালু হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে স্টক মার্কেটিং-এর ব্যবসা শুরু হয়েছে পৃথিবীব্যপী।
উল্লেখ্য যে, কোম্পানির এই শেয়ারকে আরবীতে 'সাহম' বলা হয়। সা্হম অর্থ অংশ। বস্তুত শেয়ার ও কোম্পানির মালের শেয়ার হোল্ডারদের মালিকানাধীন এক অংশবিশেষেরই নাম। কেউ যদি কোন কোম্পানির শেয়ার খরীদ করে তবে শেয়ার সার্টিফিকেটের কাগজটি এই কথাই প্রমান করে যে, উক্ত ব্যক্তি এ কোম্পানির বিশেষ একটি অংশের মালিক।
আগের যুগে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি ছিল ছোট। দু'চারজন মিলে কিছু পুঁজি সংগ্রহ করে ব্যবসা-বাণিজ্য আরম্ভ করে দিতো। কিন্তু বড় ধরনের কোন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে অথবা কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হলে অনেক সময় এই গুটিকয়েক মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই অনিবার্য কারনেই বড় ধরনের ব্যবসা করার জন্য বা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য কোম্পানি গঠন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে নিয়ম হলো, যখন কোন কোম্পানি আত্মপ্রকাশ করে, তখন এর উদ্যোক্তাগণ এর গঠন কাঠামো এবং পরিচালনা পদ্ধতি প্রকাশ করে। বাজারে শেয়ার ছাড়ে অর্থাৎ লোকদেরকে এ কোম্পানির অংশীদার হওয়ার জন্য আহবান জানায়। তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে যারা এ শেয়ার খরীদ করে, তারা এ কোম্পানির অংশীদার হিসেবে গণ্য হয়। নবগঠিত কোম্পানির শেয়ার এক শর্তে খরীদ করা জায়িয। তা হচ্ছে, হারাম কাজের উদ্দেশ্যে এ কোম্পানি গঠিত হবে না। হারাম কাজের উদ্দেশ্যে কোন কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলে এ কোম্পানির শেয়ার খরীদ করা কোনক্রমেই জায়িয হবে না। অবশ্য কোন ব্যক্তি যদি স্টক মার্কেট হতে শেয়ার খরীদ করে, তবে তাকে চারটি শর্তের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
১. কোম্পানির যাবতীয় কারবার হালাল হতে হবে। কোম্পানি কোনরূপ হারাম কাজে জড়িত হতে পারবে না। যেমন সুদী ব্যাংক না হওয়া, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি না হওয়া এবং মদ উৎপাদনের কোম্পানি না হওয়া ইত্যাদি। কোম্পানি হারাম কারবারে লিপ্ত হলে এর শেয়ার খরীদ করা কোন অবস্থাতেই জায়িয হবে না। প্রথমত শেয়ার ছাড়ার অবস্থায়ও জায়িয হবে না এবং পরবর্তীতে স্টক মার্কেট হতেও খরীদ করা জায়িয হবে না।
২. কোম্পানির গোটা-অর্থ লিকুইড এসেট্স নগদ টাকা হবে না। বরং কোম্পানির কিছু অর্থ-সম্পদ ফিক্সড আসেট্স স্থাবর সম্পত্তি থাকা আবশ্যক। কোম্পানির যদি কোন স্থাবর সম্পত্তি না থাকে, তবে শেয়ার সমুহ-এর মূল দাম থেকে কম বা বেশি দামে বিক্রি করা জায়িয হবে না। বরং এ অবস্থায় তা মূল দামেই বিক্রি হবে। মূল দামের কম বা বেশিতে বিক্রি করা হলে তা সুদে পরিণত হবে। অর্থাৎ দশ টাকার সেয়ার এগার টাকাতেও বিক্রি করা জায়িয হবে না।
৩. কোম্পানি যদি নিজেদের ফান্ড বাড়ানোর জন্য ব্যাংক থেকে সুদ্ভিত্তিক ঋণ গ্রহন করে অথবা অতিরিক্ত অর্থ যদি সুদী একাউন্টে জমা রাখে, তবে এমতাবস্থায় কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করা জায়িয হবে কিনা, এ সম্বন্ধে আলিমগনের একাধিক মত রয়েছে। কোন কোন বিশেষজ্ঞ আলিমের মতে, এ অবস্থায় এ কোম্পানির শেয়ার খরীদ করা জায়িয হবে না। বিজ্ঞ উলামায়ে কিরামের মতে, কোন শেয়ার হোল্ডার যদি এ সুদী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, বিশেষভাবে বার্ষিক মিটিংয়ে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করে, তবে তার জন্য এ শেয়ার খরীদ করা জায়িয হবে এবং সে দায়িত্ব মুক্ত বলে বিবেচিত হবে।
৪. মনে রাখতে হবে, কোম্পানির মূল ব্যাবসা যদি হালাল হয় এবং পরবর্তীতে এর মধ্যে যদি কোন সুদী পয়সা এসে যায়, তবে লভ্যাংশ বন্টনের সময় ইনকাম স্টেটমেন্টের মাধ্যমে এ কথা জেনে নিতে হবে যে, লভ্যাংশের মাঝে কত পারসেন্ট সুদের অংশ রয়েছে। যে পরিমাণ সুদের অংশ থাকবে ঐ পরিমান টাকা হিসাব করে গরীব ও দুঃস্থ মানুষের মধ্যে তা বিতরণ করে দিবে। অন্যথায় সুদ গ্রহনের গুনাহে গুনাহ্গার হতে হবে।
মোটকথা হচ্ছে, শেয়ার ক্রয় বৈধ হওয়ার জন্য চারটি শর্ত লক্ষণীয়ঃ
১. ব্যবসা হালাল হতে হবে।
২. কোম্পানির কিছু স্থাবর সম্পত্তি থাকতে হবে। সমস্ত সম্পদ নগদ টাকায় না হওয়া আবশ্যক।
৩. কোম্পানি সুদী কারবারে জড়িত হলে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।
৪. লভ্যাংশ বন্টনের সময় এতে সুদী টাকা থাকলে হিসাব করে তা কাউকে দিয়ে দিতে হবে।[ক]
ক. জাদীদ ফিক্হী মাসাইল, ১ম খন্ড, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানী।
(অধ্যায়-১১) ইসলামী অর্থনীতি
বইঃ দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
প্রকাশনাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
Book: Islam In Daily Life
Publication: Islamic Foundation Bangladesh
Source: http://